Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

তরমুজের আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল

তরমুজের আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল
ড. একেএম কামরুজ্জামান
তরমুজ বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় ফল সমূহের একটি। এটি বেশ পুষ্টিকর এবং উপাদেয় ফল। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদশের বিভিন্ন জায়গায় এর চাষ হয়ে থাকে। তরমুজের উল্লেখযোগ্য পুষ্টি সমূহ হচ্ছে- ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ৯২% পানি, ৩০ কিলোক্যালরি শক্তি, ০.৬১ গ্রাম আমিষ, ০.১৫ গ্রাম চার্বি, ০.৪ গ্রাম আঁশ, ৬.২ গ্রাম শ্বেতসার, ২৩০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন, ৫৬৯ ওট ভিটামিন এ, ০.৪৯৮ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি, ৮.১ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি, ১১২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১১ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.২৪ মিলিগ্রাম লৌহ রয়েছে।
জলবায়ু ও মাটি : বেশি শীতও না, আবার বেশি গরমও না এমন আবহাওয়া তরমুজ চাষের জন্য উত্তম। তরমুজের ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল তাপমাত্রা হলো দিনের বেলায় ২৫-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মেঘলা আবহাওয়ায় তরমুজরে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটিই এর চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।
জাত ও বীজের হার : বারি তরমুজ-১, বারি তরমুজ-২, পাকিজা, সুইট ক্রাঞ্চ, ব্ল্যাক চ্যাম্প, কারিশমা। বীজের পরিমাণ ৫০০-৭০০  গ্রাম/হেক্টর  
শোধন ও বপনের সময় : প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম অটোস্টিন ব্যবহার করে ভালোভাবে ঝাকিয়ে বীজ শোধন করা যায়। বীজ শোধনের ফলে তরমুজের এ্যানথ্রাকনোজ, লিফস্পট, ব্লাইট ইত্যাদি রোগ ও বপন পরবর্তী সংক্রামন রোধ সম্ভব হয়।
জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বছরই এই জাতের তরমুজ চাষ করা যায়। এই জাত বছরে ৩ বার চাষ করা যায় যেমন- জানুয়ারি, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায় এবং ৪ মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়।
চারা উৎপাদন, বীজ তলায় চারার পরিচর্যা ও চারার সংখ্যা :
পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করাই উত্তম। এতে বীজের খরচ কম লাগে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করতে হলে প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে। অতঃপর প্রতি ব্যাগে ১টি করে বীজ বুনতে হবে। নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে বীজ গজানোর সমস্যা হয়। এজন্য শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে চারা ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে। চারাগাছে ‘রেড পামাকিন বিটল’ লালচে পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়। হাতে ধরে এ পোকা সহজে দমন করা যায়। চারার বয়স ২২-২৫ দিন হলে মাঠে প্রস্তুত গর্তে লাগাতে হবে। ২.০ মি প্রশস্ত বেডে এক সারিতে গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ১.৫ মি. হয়ে থাকে। হেক্টর প্রতি চারার সংখ্যা ২৯০০টি।  
জমি ও বেড তৈরি : এসব ফসল চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি.। বেডের প্রস্থ হবে ২.০ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামত নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি. ব্যাসের সেচ নালা থাকবে।
বর্ষাকালে চাষ
যদি বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন-সেপ্টেম্বর মাসে চাষ করা হয় তাহলে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাচাতে চাষ করা যায়। সেক্ষেত্রে ৩.০ মিটার বেডের দুই পার্শ্বে ১.০ মিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে এবং গাছ রোপণ করতে হবে।   
চারার বয়স ও রোপণ : বীজ গজানোর পর ২২-২৫ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর পানি দিতে হবে। চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয় নতুবা শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে ঢলে পড়া রোগের (ফিউজারিয়াম উইল্ট) জীবাণু ঢুকবে এবং শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে।
সার ব্যবস্থাপনা : সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি সারণি দ্রষ্টব্য।
পরবর্তী পরিচর্যা : তরমুজ পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফল ধারণ ব্যাহত হবে এবং যেসব ফল ধরেছে সেগুলোও আস্তে আস্তে ঝরে যাবে। কাজেই সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য কালো রঙের মালচিং পেপার ব্যাবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। যেমন- আগাছা নিয়ন্ত্রণ, সেচের পানি সাশ্রয় ও রোগ পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। জমি সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। চারা রোপণের পর গাছ প্রতি সারের উপরি প্রয়োগের যে মাত্রা উল্লেখ করা আছে তা প্রয়োগ করতে হবে। যদি মালচ পেপার ব্যবহার করা হয়, তাহলে ইউরিয়া ও এমওপি সার মাত্রা অনুযায়ী পানিতে গুলিয়ে (১-সার :১০০-পানি) অনুপাতে সার যুক্ত পানি মালচিং পেপার গাছ এর গোড়ায় দিতে হবে।
ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন : হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাছাড়া ফল ধরার জন্য হেক্টর প্রতি ২-৩ টি মৌমাছির কলোনী স্থাপন করা প্রয়োজন।
বিশেষ পরিচর্যা : গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি. পর্যন্ত ডালপালাগুলো ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে। সময়মতো সেচ দিয়ে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ নিড়ানি দিতে হবে।  
ফসল তোলা (পরিপক্বতা শনাক্তকরণ) ও ফলন : একটি গাছে ৩-৪টি ফল ধরলে তা যথেষ্ট। ফলের গায়ে টোকা দিলে যদি ডাব ডাব শব্দ হলে তবে ফল পরিপক্ব হয়েছে বলে প্রতীয়মান হবে। ফলের বিপরীত দিকে আকর্ষী গুলো যদি শুকিয়ে যায় তবে ফল পরপিক্ব হয়েছে বলে প্রতীয়মান হবে। জাত ও মৌসুম ভেদে পরাগায়নের ৪২-৪৫ দিন পর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। বিঘা প্রতি ৪-৫ টন ফলন হয়।
বীজ উৎপাদন : বারি তরমুজ ১ ও বারি তরমুজ ২ স্বপরাগী জাত হওয়ার কারনে এদের বীজ কৃষক নিজেই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবে। তরমুজের একই গাছে পুরুষ ও ċŪ ফুল ভিন্ন ভিন্ন থাকে। তরমুজের ফুল সকালে ফোটে। এক্ষেত্রে পুরুষ ও ċŪ ফুল ফোটার আগের দিন বিকালে কাগজের প্যাকেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে অন্য জাতের পুরুষ ফুলের পরাগ রেণু দ্বারা পরাগায়িত হতে না পারে। পরের দিন সকাল নয়টার মধ্যে পুরুষ ফুল ছিড়ে এনে ċŪ ফুলের গর্ভমু-ে স্পর্শ করে পরাগায়ন ঘটাতে হবে। পরাগায়িত করার পর আবার ব্যাগ দ্বারা ċŪ ফুলটি ২-৩ দিন ঢেকে রাখতে হবে এবং লাল বা অন্য কোন রঙের ফিতা বেধে দিতে হবে।
বীজ সংগ্রহ : ফল যখন সম্পূর্ণ পরিপক্ব হয়ে যায়, তখন মাঠ থেকে নিয়ে আরো ৫-৭ দিন ঘরে রেখে দিতে হবে। এরপর তরমুজ কেটে বীজ বের করতে হবে। সংগ্রীহিত বীজ রোদে ভালো করে শুকিয়ে বায়ু নিরোধক পাত্রে ঠা-া ও শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
ক্ষতিকর বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
মাছি পোকা : সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার করা প্রয়োজন। ফেরোমন ৫০-৬০ দিন পর্যন্ত কার্যকরী থাকে বলে ব্যবহারের ৬০ দিন পর প্রয়োজনানুসারে পুরাতন ফেরোমন পরিবর্তন করে নতুন ফেরোমন ব্যবহার করতে হবে। বিষটোপ ফাঁদে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট হয় এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে ক্রমানুসারে ১২ মি: দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে।
পামকিন বিটল : চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলা যায়। চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বেঁচে যায়। আক্রমনের হার বেশি হলে চারা গজানোর পর প্রতি মাদার চারদিকে মাটির সাথে চারা প্রতি ২-৫ গ্রাম অনুমোদিত দানাদার কীটনাশক (কার্বফুরান জাতীয় কীটনাশক) মিশিয়ে গোড়ায় পানি সেচ দেয়া।
জাব পোকা : ক্ষেতে হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা প্রয়োজন। আক্রমণের শুরুতে বায়োনিম প্লাস (অুধফরৎধপঃরহ) @ ১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত পাতায় ¯েপ্র করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সুপারিশকৃত জৈব কীটনাশক (ফাইটোক্লিন, বায়োমেক্স এম, সাকসেস ২.৫ এস সি) ব্যবহার করা যেতে পারে। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে imidacloprid গ্রুপ এর অনুমোদিত কীটনাশক  প্রয়োগ করে তা দমন করা যায়।
এনথ্রাকনোজ : রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যাভিষ্টিন/নোইন বা একোনাজল আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে।
ফিউজারিয়াম উইলট : প্রতি ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডাইথনে এম এবং রিডোমিল গোল্ড ৭ দিন পর পর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা।   

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউট, মোবাইল : ০১৭৫৪১১২০৫০, ই-মেইল :akmqzs@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon